খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজ থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে আমাদের করণীয়

নিজাম উদ্দিন আহমেদ

আল্লাহ পদত্ত নিয়মত গুলোর মধ্যে সুস্বাস্থ্য হলো অন্যতম। প্রচলিত প্রবাদ তাই বলে “স্বাস্থ্য’ ই সুখের মূল”। মানুষ এই নশ্বর পৃথিবীতে ভোগ বিলাসের জন্য অহর্নিশ প্রণিপাত করছে জীবন যৌবন। বিনষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। স্রষ্টার বন্দনা করতে ভুলে যাচ্ছে মানুষ। আর এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে হারাচ্ছে স্বাস্থ্য। বিত্ত বৈভব যখন থৈ থৈ করছে স্বাস্থ্য হীনতার কারণে সে সুখ আর উপভোগ করা হয়ে ওঠে না।

মার্কিন ধনকুব বেড ফোর্ড পেটের পীড়ায় ভুগতেন। সহজে কোন খাদ্য হজম হতো না। এ নিয়ে তার জীবন বিশ্রী রকমের খারাপ ছিলো। তিনি যখন কারখানা পরিদর্শনে যেতেন, দেখতেন তার কর্মচারীরা জ্যাম, জেলী, বাটার, ফল দিয়ে পাউরুটি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে, তখন তার বড় কষ্ট হতো নিজের অগ্নিশায়ের জন্য। যেদিন একটি ডিম খেয়ে হজম করতেন, ডায়েরীতে লিখতেন “আজ আমি একটি ডিম খেয়ে হজম করতে পেরেছি”।

সেই মূল্যবান স্বাস্থ্য যা সম্পদ হিসেবে বিবেচ্য। তা সংরক্ষণ বা রক্ষা করতে আমরা অপ্তবাক্যের মধ্যে আবদ্ধ রয়েছি। স্বাস্থ্যের উন্নয়নের পরিকল্পনা, বাজেট, বক্তৃতায় বন্দী। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আধুনিক মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা গড়ে ওঠেনি। ফি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পার্শ্ববতী দেশগুলোর চিকিৎসালয়ে ব্যয় করে আসে জনগণ।

২০২৩ সালের ১১ আগষ্ট ‘জাগো নিউজ ২৪’ এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় প্রতি বছর ২৫ লাখ বাংলাদেশী ভারতে  চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গমন করে। এটি একটি ভয়াবহ প্রতিবেদন। প্রতি বছর কতো হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা চিকিৎসা খাতে অন্য দেশকে দিয়ে আসতে হয় তা ভাবলে বিস্মিত, বিমূঢ় হতে হয়। এই অর্থ দেশে বিনিয়োগ হলে দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ হয়। রাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে, বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকেরা বেশিরভাগ ভারতে যায়।

চলতি বছর ২০২৪ এ ভয়াবহ বন্যা এবং মাত্রাতিরিক্ত বর্ষণ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভূতপূর্ব জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। পেটের পীড়া, চর্মরোগ, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব এখন লক্ষ্যণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এখন প্রশ্ন হলো দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হলো কেন? সরেজমিনে ঘুরে এবং পর্যবেক্ষণে দেখা যায় বিগত বছর গুলোতে সরকারের ছত্র ছায়ায় সরকারি নদী, খাল, পুকুর দখল স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। অপরিকল্পিত আবাসনের নামে নদী, খাল দখল করে রাস্তা নির্মাণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় খাল ও নদীগুলো যা দিয়ে পানি নিষ্কাসন হয়, তা সংস্কার না করা। জেলা, উপজেলা প্রশাসনও এগুলোর জন্য দায়ী।

একজন জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমন্ত্রিত না হলে কোন এলাকা পরিদর্শনে যান না। এরা যদি কদাচিৎ কোন গ্রাম বা উপজেলা পরিদর্শন করতেন, তাহলে বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারতেন। ফলে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হতো।

প্রতিটি হাইওয়ের পাশে অবৈধভাবে ইট, বালুর ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। যানবাহন চললে একটু বাতাস হলেই বালুগুলো উড়ে জন জীবন বিপর্যস্ত করে। এতে শ্বাশ-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সর্দি কাশির মত জটিল রোগ হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তরের কমর্কর্তারা মেগা প্রকল্পের জন্য ব্যস্ত থাকে। অথচ স্বল্প ব্যয়ে তাৎক্ষণিক অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। সে পথে তারা হাঁটতে চায় না। দীর্ঘ সূত্রতায় আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করছি। এতে স্বাস্থ্য, পরিবেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

 জেলা প্রশাসক প্রতি চার মাস অন্তর একটি অবহেলিত গ্রাম/ ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতি দুই মাস অন্তর একটি অবহেলিত গ্রাম/ ইউনিয়ন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
 পানি উন্নয়ন বোর্ড স্ব স্ব আওতাধীন খাল, নালা, পুকুর সংস্কারের ব্যবস্থা নেবেন।
 পুলিশ প্রশাসন হাইওয়ের পাশে অবৈধ ইট, বালুর ব্যবসা বন্ধের জন্য ভূমিকা রাখবেন।
 ঔষধ প্রশাসন ঔষধের মূল্য যথাযথ নির্ধারণের পদক্ষেপ নিবেন। সাধারণ ঔষধ গুলোর মূল্য ২/৩ বছরের মধ্যে ৪/৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

সর্বোপরি আমরা সচেতন নাগরিক হিসাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারলে সরকারের সদ্বিচ্ছা ফলপ্রসূ হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!